বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি:
পাবনা সাঁথিয়া উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া রিফাত (১৩) কৈশরের প্রাণোচ্ছ্বল পদচারণায় কয়েকদিন আগেও মুখর ছিল ক্লাসরুমের সামনের বেঞ্চ, স্কুলের মাঠ,বাড়ির উঠান। রিফাত করমজা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ৩৬ নং পুন্ডুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। তার পিতা আরিফ একজন হতদরিদ্র ঝালমুড়ি বিক্রেতা। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে পাঁচজনের সংসার তার।
সরেজমিনে করমজা ইউনিয়নের পুন্ডুরিয়া কারিগর পাড়া তার বাড়িতে গিয়ে জানা যায়,কখনো পথে কখনো স্কুলের পাশে ঝালমুড়ি বিক্রি করে প্রতিদিন দুই থেকে তিন শ টাকা আয় করেন রিফাতের বাবা। এই অল্প আয়ের সংসারের বড় সন্তান রিফাতের মাঝে মধ্যে মাথা ব্যাথা করত। দিন দিন তার মাথা ব্যাথার অবস্থা অবনতি হয়। রিফাতকে প্রথমে স্থানীয় উপজেলা স¦াস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়, পরবর্তীতে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মানসিক ও ব্রেন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তাহরিমা মোস্তারীকে দেখানোর পর তিনি জানিয়েছেন রিফাতের ব্রেনে টিউমারের সৃষ্টি হয়েছে এবং ব্রেনে ইনফেকশন সে ক্ষেত্রে অপারেশন ছাড়া তাকে বাঁচানো সম্ভব নয় এবং জরুরি ভিত্তিতে শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। অন্যথায়, তার জীবন নাশের আশংকা রয়েছে। অসহায় রিফাতের শারীরিক সমস্যা দিন দিন জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে।
সবশেষে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ডাক্তাররা । সেই কিশোরপ্রাণ টাকার অভাবে চিকিৎসাহীন অবস্থায় আজ শুয়ে আছে বাড়ির বিছানায়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন অস্ত্রোপচারের জন্য তার অনেক টাকার দরকার। রিফাতের বাবা আরিফ একজন হতদরিদ্র ঝঁলমুড়ি বিক্রেতার পক্ষে এতো টাকা জোগাড় করার সামর্থ্য নেই। আরিফ এর সংসারে স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে।
রিফাতের বাবা আরিফ হোসেন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, সহায় সম্বল হিসেবে আমার কিছুই নেই। আমার ছেলের চিকিৎসা বাবদ এপর্যন্ত ৫০/৬০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে যা সবই কিস্তি আর ধারদেনা করেছি। একদিন ঝালমুড়ি বিক্রি না করলে আমার সংসার চলে না। কিভাবে এত টাকা দিয়ে আমার ছেলের চিকিৎসা করাবো? বাবা হয়ে দিনরাত ছেলের কান্নাকাটি আর সহ্য করতে পারছি।
এমতাবস্থায় অসহায় হতদরিদ্র পিতা-মাতা রিফাতের সুচিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবান, হৃদয়বান ও দানশীল ব্যক্তির সাহায্য কামনা করেছেন।
পুন্ডুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.রফিকুল ইসলাম বলেন, ছেলেটি অত্যন্ত ভদ্র ও মেধাবী ছিল। তার এই বয়সে এমন জটিল রোগ আসলেই খুবই কষ্টকর। আমার স্কুল এবং আমি ব্যাক্তিগতভাবে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। রিফাতের সুচিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের সহযোগীতা কামনা করছি।
বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ফাতেমাতুয্ জান্নাত জানান, ‘রিফাতের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ও পরিক্ষার কাগজপত্র দেখেছি। তাতে দেখা গেছে সে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে তার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউিট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের মতো বড় কোনো হাসপাতালেই এধরনের রোগের অস্ত্রোপচার সম্ভব’।
সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ আলম বলেন, আমাদের উপজেলা প্রশাশনের সমাজসেবা অধিদপ্তরে থেকে শিশুটির চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করা হবে। আমি তার খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি তার চিকিৎসা করার জন্য আর কি ধরনের সহযোগিতা করতে পারি।
রিফাতের উন্নত চিকিৎসার জন্য কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা প্রয়োজন।
চিকিৎসার্থে সহযোগিতা করতে রিফাতের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান।
Leave a Reply