হৃদয় হোসাইন,বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি:
পাবনা যমুনার চরাঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে পরিবহনের প্রধান মাধ্যম ঘোড়ার গাড়ি। বর্ষায় পরিবহনের এক মাত্র মাধ্যম নৌকা। শুষ্ক মৌসুমে ঘোড়ার গাড়ির বিকল্প হিসেবে পায়ে হেঁটেই নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটান বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া,নতুনভারেঙ্গা,পুরানভারেঙ্গা, রুপপুর,ঢালারচর ইউনিয়ন এর চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। হেঁটে যাতায়াত করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন দিন দিন বাড়ছে। চরাঞ্চলে একসময় যাতায়াতে ব্যবহৃত হতো গরু ও মহিষের গাড়ি।ঘোড়ার গাড়িতে ওঠার শখ সাধারণ মানুষের কল্পনাতেই সীমাব্ধ ছিল। কালের পরিক্রমায় সেই ঘোড়ার গাড়ি এখন প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের মানুষের পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।পানি শুকিয়ে চর জাগলেই শুরু হয় কৃষকদের কাজ। তারা ব্যস্ত সময় পাড় করেন বালুর চরে ফসল ফলানোর স্বপ্ন নিয়ে। চরে সাধারণত বাদাম, ভুট্টা, মসুর ডাল, খেসারি ডাল, কাউন, বোরো ধান,মিষ্টি আলু ইত্যাদি ফসল চাষ করেন কৃষকরা। উৎপাদিত ফসল ঘরে তোলার জন্য ঘোড়ার গাড়িই তাদের একমাত্র ভরসা। ঘোড়ার গাড়ির চালক হিসেবে রয়েছে বেশির ভাগ ১৫ থেকে ২২ বছর বয়সের ছেলেরা। পরিবারে অভাব-অনটনের কারণে সংসারের হাল ধরতেই এ কাজ বেছে নিয়েছে বলে জানায় তারা। ঘোড়ার গাড়ি চালক আল-আমিন এর সাথে কথা হলে সে জানান। বাবা একক আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। সংসারে সহযোগিতার জন্য একটি ঘোড়া কিনে দেন আল-আমিনকে। নিজেদের ফসল ঘরে তোলার ফাঁকে গাড়িতে অন্যদের ফসল এনে। নাকালিয়া বাজার থেকে নৌকায় পাড় হওয়া মানুষের মালামাল বাড়ীতে পৌঁছে দিয়ে বাড়তি আয় শুরু করেন। এভাবে সংসারে অভাব কমতে থাকে।সব মিলিয়ে নিদিষ্ট রাস্তা না থাকায় যোগাযোগ এর ভোগান্তি নিয়ে দিন কাটছে আল-আমিনদের। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ঘোড়ার গাড়ি তৈরিতে খরচ কম। ঘোড়ার দামও হাতের নাগালে। ৩০-৫০ হাজার টাকা হলেই মিলছে একটি ঘোড়া। কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে বেশ কয়েক বছর গাড়ি টানতে পারে ঘোড়াগুলো। তবে নিয়মিত প্রয়োজনীয় খাবার ঘোড়াকে খাওয়াতে হবে। তা না হলে পায়ের শক্তি হারিয়ে ফেলবে ঘোড়া। খাদ্য হিসেবে ধানের কুঁড়া,সরিষার খৈল, ছোলা, ভূষি ও চালের খুদ পছন্দ ঘোড়ার। সব মিলিয়ে ঘোড়া পালনে খরচও কম। নানা অনুকূল পরিবেশের কারণে উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন এর চর সাঁড়াশিয়া সহ কয়েকটি চরাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।রাস্তা আর নদীতে ব্রিজ হলে ভোগান্তি কমবে চরের মানুষের।শহরের মানুষের চেয়ে এক রকম বিভিন্ন জীবনযাপন করেন চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। পরিবহন ভোগান্তি দৈনন্দিন এর সাথী জরুরি রোগী বা হাট বাজারের প্রয়োজনে সল্প সময়ে উপজেলা সদর এর সাথে যোগাযোগ খুবই কঠিন। সামান্য বৃষ্টি হলে পায়ে হেঁটে চলাচল কষ্টসাধ্য। চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব দিয়ে দেখার দাবি চরাঞ্চলের মানুষের।
Leave a Reply