নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। এ কমিটি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের দ্বন্ধ চরমে উঠেছে। ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের প্যাডে প্রকাশিত ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রত্যাখ্যানের ঘোষনা দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তাদের দাবি, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটি বাতিল করে মনগড়া মতো জেলা আওয়ামীলীগের প্যাডে উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি দেওয়া হয়েছে।
এ কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগে পদ পাওয়ার যোগ্য নয় এমন ব্যক্তিদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। এ কমিটির বিষয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক আবদুললাহ আল কায়সার। এ কমিটি বাতিল করে তাদের দেওয়া প্রস্তাবিত কমিটির অনুমোদনের অনুরোধ করেন এ দুই নেতা। তবে এ কমিটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালেচনার ঝড় উঠেছে।
গত তিন দিন ধরে ফেসবুকে নেতাকর্মীরা এ কমিটি দেওয়া নিয়ে অর্থের লেনদেন হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন। তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মোহাম্মদ বাদল অর্থ লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তার দাবি পরীক্ষিত নেতাদের এ কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গত ৪ জুলাই রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের প্যাডে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহম্মদ শহীদ বাদল স্বাক্ষরিত ৭১ সদস্য বিশিষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করেন। জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত কমিটি প্রকাশের পরই পদ বঞ্চিত নেতাসহ সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ন বাদ পড়া ১৯ জনের মধ্যে জনপ্রতিনিধিসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল হাই ভূঁইয়ার ছেলে আহসান হাবীব টিপু, কাঁচপুরের ওবায়দুল হক মাস্টার, মেঘনা শিল্পাঞ্চল শ্রমিক লীগের আহবায়ক তাজুল ইসলাম, যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল হালিম, পিরোজপুরের মোশারফ মেম্বার, সোনারগাঁ পৌরসভা আওয়ামীলীগ নেতা কবির হোসেন, আতাউর রহমান আক্তার, সোনারগাঁ ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক ভিপি রফিকুল হায়দার বাবু, শম্ভুপুরার সদ্যপ্রয়াত সংগ্রামী নেতা নাছির মেম্বারের ছেলে রাসেলসহ অনেকেই বাদ পড়েছেন। তাছাড়া প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুর রশিদ ভূইয়াকে পদ পরিবর্তন করে সদস্য করা হয়েছে ও শহিদুল্লাহ মিয়াকে পদবঞ্চিত করা হয়েছে। ফলে জেলা আওয়ামীলীগের ব্যক্তিরা লাভবান হলেও দলের অনেক ক্ষতি হয়েছে।
সোনারগাঁ পৌরসভা আওয়ামীলীগ নেতা কবিব় হোসেন বলেন, বিএনপি জোট সরকারের আমলে মামলা হামলার শিকার হয়েছে। এমন নেতাদের পদবঞ্চিত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত কমিটিতে যারা ছিলেন তারা সঠিক ছিল। এখন যাদের কমিটিতে আনা হয়েছে তাদের অনেকেই চেনেন না। দলীয় কর্মসূচীতেও তাদের দেখা মেলে না। তাছাড়া জাতীয় পার্টি ও বিএনপি’র পরিবারের নেতাকেও পদ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া এক নেতার ১৯ জন অনুসারীদের নিয়ে জেলা আওয়ামীলীগ পূনাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেন।
আওয়ামীলীগ নেতা আহসান হাবীব টিপু জানান, অনুমোদিত কমিটি নিয়ে দলীয় নেতার্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। তার বাবা দলীয় ক্রান্তিকালে সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। বিএনপি জামায়াত সরকারের সময় বাবাসহ তারা পরিবার অসংখ্য মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন। তার নাম প্রস্তাবিত কমিটিতে থাকলেও পুর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল কায়সার বলেন, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি। আমরা যাচাই বাছাই করে ত্যাগী নেতাদের নিয়ে একটি প্রস্তাবিত কমিটি জেলা আওয়ামীলীগের নেতাদের কাছে প্রেরণ করেছি।
সেই কমিটি অনুমোদন দেওয়া কথা। জেলা আওয়ামীলীগ আমাদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করেই তাদের প্যাডে একটি কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন। কেউ চিনে না এমন অনেক ব্যক্তিদের এ কমিটিতে আনা হয়েছে। কমিটি অনুমোদন হলে উপজেলা আওয়ামীলীগের প্যাডে হওয়ার কথা। কিন্তু জেলা আওয়ামীলীগের প্যাডে কেন? আমাদের প্রস্তাবিত কমিটির কারো বিষয়ে কোন অভিযোগ থাকলে আমাদের জানিয়ে পরিবর্তন করতে পারতেন। কোন কিছু না জানিয়ে ১৯ জন নেতাকে বাদ দিয়ে কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন। এ বিতর্কিত কমিটির অভিযোগ নিয়ে প্রয়োজনে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছে যাবো।
সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, আমরা উপজেলায় রাজনীতি করি। কে কেমন, কারা দল করে আমাদের সবই জানা। জেলায় বসে আমাদের প্রস্তাবিত কমিটির সকল নেতাদের পদ পরিবর্তন করে ১৯ জনকে বাদ দিয়ে যারা দলীয় কর্মসূচীতে অংশ নেয় না। অনেকের পরিবার বিএনপি কেন্দ্রিক এমন ব্যক্তিদের অর্ন্তভূক্ত করে কিভাবে এমন একটি কমিটি অনুমোদন দেয়? জেলা কমিটির পক্ষ থেকে জেলা আওয়ামীলীগের দলীয় প্যাডে এভাবে উপজেলা কমিটি অনুমোদন দেয়া ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। আমরা এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছি। জেলা কমিটির অনুমোদিত তালিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নেতাকর্মীদের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মোহাম্মদ বাদল বলেন, প্রস্তাবিত কমিটির অনেক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে নতুন পরীক্ষিত কিছু নেতাকে অর্ন্তভূক্ত করে সোনারগাঁ উপজেলা কমিটি অনুমোদন দিয়েছি। এটাই সঠিক। তবে কেউ এ কমিটিকে না মানলে আমাদের কিছু করার নেই। টাকার বিনিময়ে কমিটির পদ দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন।
২০২২ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতারা অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়াকে সভাপতি, ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে সহ-সভাপতি ও সাবেক সাংসদ আবদুল্লাহ আল কায়সারকে সাধারণ সম্পাদক পদে ৩ সদস্য বিশিষ্ট সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগ
Leave a Reply