হৃদয় হোসাইন-পাবনা প্রতিনিধি:
সব থেকেও যেনো কিছু নেই।আছে শুধু বুক ভরা কষ্টের দীর্ঘশ্বাস।সব ছেড়ে নদীতে একাকী ভাসমান ঘর বানিয়ে বসবাস। মাছ শিকার করে চলছে জীবন জীবিকা। এমন মানবতার জীবন যাপন করছেন পাবনার বেড়া উপজেলার সিরাজ মিয়া। ছাব্বিশ বছর ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে কৈটোলা পাম্পিং স্টেশন এর পাশে কাগেশ্বরী নদীতে প্লাস্টিকের ড্রামের উপর ঘর বানিয়ে কষ্টের জীবনধারণ করছেন দুই পুত্র চার কন্যা সন্তানের জনক সিরাজ মিয়া। ৭০ বছর বয়সী সিরাজ মিয়ার জীবনের গল্প টা সমাজের অন্য দু’চার জনের থেকে একেবারে আলাদা। জন্মের পর স্বাভাবিক ছিলো সব কিছু,ছিলো পরিবার সংসার পায়ে হেটে চলাচলের ক্ষমতা। এক অজানা অসুখে হারাতে হয়েছে দুইটি পা,চলাচলের সক্ষমতা হারিয়ে অনেকটা বোঝা হয় পরিবারের কাছে। তবু থেমে নেই জীবন পরিবারের অবহেলায় অভিমানে ছাব্বিশ বছর পরিবার ছাড়াই নদীতে বসবাস তার। পানিতে হাত ব্যাবহার করে নৌকা চালিয়ে খুবই সহজে এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া যায়। তাই তিনি নৌকার জীবন বেঁছে নিয়েছে। নদীতে মাছ শিকার করে স্থানীয়দের নিকট বিক্রয় ও আত্মাীয় স্বজন এলাকাবাসীর সহায়তা টিকে আছে নদীতে নৌকার জীবন। এলাকা বাসির সহায়তায় নদীতে প্লাস্টিকের ড্রামের উপর ঘর বানিয়ে জীবনধারণ।পরিবারের কেউ তেমন খোঁজ খবর রাখেন না। সিরাজ মিয়া সকলের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন ইচ্ছাশক্তি থাকলে সকল প্রতিকূলতা জয় করা যায়। শারীরিক কিছু সমস্যা ছাড়া সকল অসুবিধার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন তিনি। তার এ জীবনযাত্রার গল্প জানতে চাইলে সিরাজ মিয়া বলেন,আমি চাই না কেউ আমার জন্য কষ্ট পাবে। আমি পায়ে হেটে কোথাও যেতে পাড়ি না।হাটা চলা করতে সহযোগিতা লাগে,কে কত সময় পাশে থাকবে। সবার তো নিজের ও কাজ থাকে। নৌকায় আমি খুব সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করতে পাড়ি। ছেলে সন্তান সবাই সবার মতো সংসার নিয়ে ব্যাস্ত। এলাকাবাসীর সাহায্য-সহযোগিতায় প্লাস্টিকের দামের উপর ঘর বানিয়ে বসবাস করছি। ঝড়-বৃষ্টি সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যায়। সবচেয়ে বড় সমস্যা টয়লেট। মাছ শিকার করে স্থানীয়দের কাছে বিক্রয় করি।কিছু টাকা পয়সা পাওয়া যায় সে টাকা বউয়ের কাছে দেই বউ মন চাইলে রান্না করে দেয় আর না হলে। লোকে যে যা দেয় তাই খেয়ে বেঁচে আছি। এ জীবন ভাল লাগেনা তবু মাঝে মাঝে মেনে নিতে হয় ভালো থাকতে। যতদিন আছি এভাবেই বেঁচে থাকতে চাই। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান,আমরা প্রায় ছাব্বিশ বছর দেখছি সিরাজ এভাবে নদীতে বসবাস করছে।আমরা যখন গাছের নিচে ছায়ায় বসে কথা বলি সিরাজ মিয়া ও নৌকা নিয়ে এগিয়ে এসে কথা বলে। পরিবার থেকেও যেন নেই।ঈদে এলাকাবাসী সাহায্য-সহযোগিতা করে।এভাবে দেখতে দেখতে ছাব্বিশ টি বছর নদীতে কাটিয়ে দিলো সিরাজ। তার বয়স হচ্ছে এখন একটা স্থায়ী বসবাস আর কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা হলে ভালো হবে।সিরাজের স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অনেক বার বলেছি বাড়িতে যাওয়ার কথা সে কোনো কথা শোনে না। সে নিজে একা একা চলাচল করতে চায়। বাড়িতে জায়গা কম ছেলে সন্তানদের থাকার মতো জায়গা নেই। তাই তিনি এখানে এসে মাছ ধরে। রাতে থাকছে,বাড়িতে খুবই অল্প যায়। বাড়িতে যাওয়ার কথা বললে যায় না।
Leave a Reply